‘প্রতিবেদন’ শব্দটি ইংরেজি শব্দ “Report” থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো সমাচার, বিবৃতি বা বিবরণী। নির্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য অনুসন্ধানের পর সেটিকে সুসংগঠিত করে বিবরণী আকারে উপস্থাপন করাই প্রতিবেদন। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর তথ্যসমৃদ্ধ বিবরণীকে সংক্ষেপে প্রতিবেদন বলা যেতে পারে। এখানে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম এবং উদাহরণ আলোচনার মূল বিষয়বস্তু।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম: প্রেক্ষাপট
প্রতিবেদনের কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণিবিভাগ নেই; বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। নবম–দশম শ্রেণির প্রেক্ষিতে প্রতিবেদনকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়: সংবাদ প্রতিবেদন, তদন্ত প্রতিবেদন এবং সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন। প্রতিবেদন লেখার নিয়ম অনুসারে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন, সংবাদ প্রতিবেদন এবং তদন্ত প্রতিবেদনের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে, যা প্রতিবেদনের প্রকারভেদ নির্ধারণ করে।
সংবাদ প্রতিবেদন কি?
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের উপযোগী তথ্যসমৃদ্ধ সহজ–সরল ভাষায় লেখা প্রতিবেদনকে সংবাদ প্রতিবেদন বলা হয়। এতে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে প্রাঞ্জল ভাষায় সঠিক তথ্য প্রদান করে পাঠককে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়। সাধারণত নাগরিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যা, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, দুর্ঘটনা বা প্রসঙ্গ সম্পর্কে তথ্যমূলক বিবরণ লিখন সংবাদ প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত।
সংবাদ প্রতিবেদন লেখার জন্য পত্রিকার সাংবাদিক, যেমন সংবাদদাতা, স্টাফ রিপোর্টার বা প্রতিনিধি হিসেবে ঘটনাটি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা প্রয়োজন। এই ব্লগের পরের অংশে সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম এবং নমুনা নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
সংবাদ প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে কয়েকটি সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করা হয়। প্রতিবেদনটি অবশ্যই স্পষ্ট, নির্ভুল এবং সহজবোধ্য ভাষায় লিখতে হবে, যাতে পাঠক সহজেই বিষয়টি বুঝতে পারেন।
সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম:
১. শিরোনাম (Headline):
- সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয় শিরোনাম দিতে হবে। এটি প্রতিবেদনটির মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে প্রকাশ করবে এবং পাঠকের আগ্রহ তৈরি করবে।
২. ইনট্রো বা ভূমিকা (Lead):
- প্রতিবেদনের প্রথম অনুচ্ছেদেই পুরো বিষয়ের সারাংশ তুলে ধরতে হবে। একে সংক্ষেপে লেখার চেষ্টা করতে হবে যাতে পাঠক প্রথমেই মূল তথ্য পেয়ে যান।
- ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর থাকা উচিত: কে, কী, কোথায়, কখন, কেন এবং কিভাবে।
৩. মূল অংশ (Body):
- মূল বর্ণনায় ঘটনা বা বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে।
- তথ্যগুলো ক্রমানুসারে সাজানো এবং তথ্যসমৃদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
- সূত্র বা সাক্ষ্যপ্রমাণ যুক্ত করলে প্রতিবেদনটি আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে।
৪. উপসংহার (Conclusion):
- সংক্ষিপ্ত উপসংহারে মূল বিষয়টিকে পুনরায় উল্লেখ করতে হবে। এখানে ঘটনাটি সম্পূর্ণ হয় বা কীভাবে সমাপ্তি পেতে পারে, সেটি উল্লেখ করা যায়।
নমুনা সংবাদ প্রতিবেদন:
ধরা যাক, সম্প্রতি ঢাকায় একটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নিচে এই বিষয়ে একটি নমুনা সংবাদ প্রতিবেদন দেওয়া হলো:
শিরোনাম:
ঢাকার সদরঘাটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫ জনের মৃত্যু, আহত ২০ভূমিকা:
ঢাকার সদরঘাট এলাকার একটি গুদামঘরে গতকাল রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৫ জনের মৃত্যু এবং প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট কাজ করেছে।মূল অংশ:
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আগুনের সূত্রপাত রাত ৯টার দিকে গুদামঘরের ভেতর ঘটে। এলাকাবাসী প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।দুর্ঘটনাস্থলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি চিকিৎসা দল পাঠানো হয়। আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধারে সহায়তা করেছেন।
উপসংহার:
ঢাকার সদরঘাট এলাকার এই অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বিভাগ আগুন লাগার কারণ তদন্ত করছে। এছাড়া, পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন কি?
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন হলো একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের কার্যক্রম, সাফল্য, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সুসংগঠিত বিবরণ। এই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা অংশীদারদের কাছে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা, কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা প্রদান করে।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন সাধারণত বার্ষিক, অর্ধ-বার্ষিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয় এবং এতে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যক্রমের ফলাফল, সমস্যা এবং সমাধানের সুপারিশ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
এ ধরনের প্রতিবেদন সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, সাফল্য, সমস্যা এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে সুসংগঠিত তথ্য উপস্থাপন করে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিষয়াদি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানানো হয়। একটি কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম এবং ধাপ অনুসরণ করা প্রয়োজন।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়মাবলী
১. প্রারম্ভিকা বা ভূমিকা:
প্রতিবেদনের শুরুতে প্রতিবেদনটি কেন লেখা হচ্ছে এবং এর উদ্দেশ্য কী, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এটি পাঠককে প্রতিবেদন সম্পর্কে ধারণা দেবে এবং তাদের আগ্রহ বাড়াবে।
২. প্রতিষ্ঠানের তথ্য:
প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, প্রতিষ্ঠার সাল, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, কর্মপ্রণালী এবং পূর্ববর্তী সাফল্য সংক্ষেপে বর্ণনা করতে হবে।
৩. প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু:
প্রতিবেদনের প্রধান বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। যেমন, প্রতিষ্ঠানের অর্জন, কর্মপরিকল্পনা, চ্যালেঞ্জ এবং উন্নয়ন কার্যক্রম ইত্যাদি।
৪. উল্লেখযোগ্য তথ্য ও উপাত্ত:
পরিসংখ্যান, গ্রাফ, চার্ট এবং অন্যান্য ভিজ্যুয়াল উপকরণ ব্যবহার করে প্রাসঙ্গিক তথ্য উপস্থাপন করুন। এর মাধ্যমে তথ্যগুলো সহজে বোঝানো যায় এবং পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।
৫. সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ:
প্রতিষ্ঠানের কাজের মধ্যে থাকা চ্যালেঞ্জ ও সমস্যাগুলো চিহ্নিত করুন এবং সেগুলোর কারণ বিশ্লেষণ করুন।
৬. সমাধান বা সুপারিশ:
সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সম্ভাব্য সমাধান বা সুপারিশগুলো যুক্ত করতে হবে। এগুলোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের সম্ভাব্যতা ফুটে ওঠে।
৭. উপসংহার:
প্রতিবেদনের শেষে সারসংক্ষেপসহ চূড়ান্ত মন্তব্য প্রদান করা উচিত। সংক্ষেপে প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো পুনরায় উল্লেখ করুন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানিয়ে শেষ করুন।
নমুনা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন
প্রতিবেদন: ২০২৩সালেরশিক্ষাকার্যক্রমেরপ্রতিবেদন
প্রতিষ্ঠান: আলোকিতবিদ্যানিকেতন, ঢাকা
তারিখ: ৩০ডিসেম্বর২০২৩ভূমিকা
আলোকিত বিদ্যানিকেতন গত ২০২৩ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করেছে। এই প্রতিবেদনে শিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষার্থীদের সাফল্য এবং শিক্ষকদের অবদান তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি
আলোকিত বিদ্যানিকেতন ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদান ও চরিত্র গঠন। বিদ্যালয়টি বর্তমানে ৭০০ শিক্ষার্থী নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
কার্যক্রমের বিবরণ
২০২৩ সালে বিদ্যালয়ে ২০টি নতুন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন একাডেমিক প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। বিদ্যালয়ে প্রায় ১৫০টি কম্পিউটারসহ নতুন প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য সাফল্য
২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৯৫%, এবং এ+ প্রাপ্তির হার ৫০%। এই সফলতা শিক্ষকদের নিবেদিতপ্রাণ পরিশ্রম ও শিক্ষার্থীদের মনোযোগের ফসল।
চ্যালেঞ্জ
শিক্ষকদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পাঠদান পদ্ধতিতে আরো উন্নয়ন প্রয়োজন। বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমগুলোর সংস্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা।
সুপারিশ
কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষকদের সংখ্যা বাড়ানো এবং শ্রেণীকক্ষ সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা উচিত।
উপসংহার
২০২৩ সালে বিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের ভিত্তিতে আগামী বছর আরো অগ্রগতির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তদন্ত প্রতিবেদন কি?
তদন্ত প্রতিবেদন হলো একটি নির্দিষ্ট ঘটনা, সমস্যা, দুর্ঘটনা বা অভিযোগের কারণ, প্রেক্ষাপট ও এর সাথে জড়িত তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা লিখিত বিবরণ। এই ধরনের প্রতিবেদন মূলত ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য উপস্থাপন এবং যথাযথ সমাধানের প্রস্তাব দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দ্বারা প্রস্তুত করা হয় এবং এর মাধ্যমে ঘটনার মূল কারণ, দায়ী ব্যক্তি বা ত্রুটি শনাক্ত করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির উদ্দেশ্য
তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়:
- ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করার জন্য।
- সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা সংস্থা চিহ্নিত করার জন্য।
- ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে করণীয় সুপারিশ করার জন্য।
তদন্ত প্রতিবেদন লেখার মূল বিষয়বস্তু
১. ভূমিকা: এখানে ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ, কেন এই তদন্ত করা হচ্ছে এবং এর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়।
২. তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি: সাক্ষাৎকার, দলিল-দস্তাবেজ পর্যালোচনা, সিসিটিভি ফুটেজ ইত্যাদি থেকে কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তা বর্ণনা করা হয়।
৩. ঘটনার বিশ্লেষণ:
ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ এবং কেন ঘটেছে তার বিশ্লেষণ দেওয়া হয়।
৪. মূল্যায়ন ও ফলাফল:
তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার কারণ নির্ধারণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়।
৫. সুপারিশ:
সমস্যার সমাধান বা ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং সুপারিশ উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন নিরপেক্ষ, তথ্যনির্ভর ও সুসংগঠিত হওয়া উচিত যাতে ঘটনাটি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা যায় এবং যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়।
নমুনা তদন্ত প্রতিবেদন
প্রতিবেদন: কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন
কারখানার নাম: তৌফিক টেক্সটাইলস লিমিটেড
স্থান: গাজীপুর, ঢাকা
তারিখ: ২৫ জুন ২০২৩
তদন্ত কমিটি: আব্দুল মালেক (প্রধান), মো. জাকারিয়া, শারমিন আক্তার১. ভূমিকা
গত ২২ জুন ২০২৩ তারিখে তৌফিক টেক্সটাইলস লিমিটেডের এক নম্বর ইউনিটে রাত ১০:৩০ টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয় এবং বেশ কয়েকজন কর্মচারী সামান্য আহত হন। এই তদন্ত কমিটি ঘটনার মূল কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নির্ধারণের জন্য গঠিত হয়েছে।
২. তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি
এই তদন্তের জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে:
- প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার
- সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা
- কারখানার ফায়ার সেফটি রিপোর্ট পর্যালোচনা
- আগুন নেভানোর সরঞ্জাম ও অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা পর্যালোচনা
৩. ঘটনার বিবরণ
২২ জুন রাত ১০:৩০ টার দিকে কারখানার এক নম্বর ইউনিটে হঠাৎ আগুন লাগে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় যে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। দ্রুত কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ফায়ার সেফটি সরঞ্জাম ঠিকমতো কাজ না করায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টা প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
৪. তদন্তের ফলাফল
তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডের জন্য নিম্নলিখিত কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে:
- বৈদ্যুতিক ত্রুটি: কারখানার পুরোনো বৈদ্যুতিক তার এবং অতিরিক্ত লোডের কারণে শর্ট সার্কিট ঘটে।
- ফায়ার সেফটি সরঞ্জামের অকার্যকারিতা: ফায়ার এক্সটিংগুইশার এবং অ্যালার্ম সিস্টেম ত্রুটিপূর্ণ ছিল, ফলে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
- নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব: কারখানায় নিয়মিত অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ এবং মহড়া ছিল না, যার ফলে কর্মীরা সঠিক পদ্ধতিতে আগুন নেভাতে পারেননি।
৫. সুপারিশ
এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড রোধে নিম্নলিখিত সুপারিশ প্রদান করা হলো:
- নিয়মিত বৈদ্যুতিক রক্ষণাবেক্ষণ: কারখানার বৈদ্যুতিক তার ও সরঞ্জাম নিয়মিত পরীক্ষা এবং পরিবর্তন করা।
- ফায়ার সেফটি সরঞ্জাম মেরামত: ত্রুটিপূর্ণ অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম মেরামত এবং অ্যালার্ম সিস্টেমের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা।
- প্রশিক্ষণ ও মহড়া: কর্মচারীদের অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রতিমাসে একটি অগ্নি নির্বাপক মহড়া পরিচালনা করা।
- সর্বদা প্রস্তুত থাকার ব্যবস্থা: যে কোনো জরুরি অবস্থায় দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য একটি নিরাপত্তা দল গঠন করা।
৬. উপসংহার
তৌফিক টেক্সটাইলস লিমিটেডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মূল কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক ত্রুটি এবং ফায়ার সেফটি সরঞ্জামের অকার্যকারিতা চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের সুপারিশমালা অনুসরণ করলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
তদন্ত কমিটির পক্ষে,
আব্দুল মালেক
প্রধান, তদন্ত কমিটি
২৫ জুন ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদন কি?
নিজস্ব প্রতিবেদন হলো এমন একটি প্রতিবেদন যা লেখক বা প্রতিবেদক নিজে একটি বিষয় বা ঘটনার উপর নির্ভর করে লেখে। এটি সাধারণত লেখকের ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা বা গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। নিজের মতামত, বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা অন্তর্ভুক্ত করার ফলে প্রতিবেদনটি লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।
নিজস্ব প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
নিজস্ব প্রতিবেদন হলো এমন একটি প্রতিবেদন, যা সাংবাদিক বা প্রতিবেদক নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বা নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তৈরি করেন। এটি সাধারণত বিশেষ ধরনের ঘটনা বা সংবাদকে পাঠকের সামনে তুলে ধরতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে পাঠক বাস্তব ঘটনাটি সম্পর্কে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে পারেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন লেখার নিয়মাবলী
১. ভূমিকা:
প্রতিবেদনের শুরুতে ঘটনার পটভূমি বা প্রেক্ষাপট উল্লেখ করুন। এতে পাঠক সংক্ষিপ্তভাবে বুঝতে পারবেন ঘটনাটি কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ঘটনাটি কোথায়, কখন, কীভাবে ঘটেছে এবং কেন তা প্রতিবেদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২. তথ্য সংগ্রহ:
নিজস্ব প্রতিবেদন তৈরির জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এটি হতে পারে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে।
৩. বিস্তারিত বিবরণ:
নিজস্ব প্রতিবেদনে ঘটনার ক্রমাগত বিবরণ প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। কোথায়, কখন, কীভাবে এবং কেন ঘটনা ঘটেছে, তা বিস্তারিতভাবে লিখতে হবে। তথ্য উপস্থাপনে যুক্তিসঙ্গত ও নিরপেক্ষ হতে হবে।
৪. তথ্য যাচাই ও সত্যতা:
প্রতিবেদনের সকল তথ্য যাচাই করতে হবে যাতে কোনো ভুল তথ্য না থাকে। একাধিক উৎস থেকে তথ্য যাচাই করলে প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে এবং পাঠকও এর সত্যতা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।
৫. উপস্থাপনা ও ভাষা:
প্রতিবেদনের ভাষা সহজ-সরল, প্রাঞ্জল এবং সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত। পাঠক যাতে সহজেই বুঝতে পারেন, সেইভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
৬. প্রাসঙ্গিক উপকরণ যুক্ত করা:
প্রতিবেদনে তথ্যপ্রমাণ, ছবি, সাক্ষাৎকার বা উক্তি সংযুক্ত করা যেতে পারে। এতে পাঠকের কাছে ঘটনার বাস্তবতা আরও স্পষ্ট হবে।
৭. উপসংহার:
প্রতিবেদন শেষে সারসংক্ষেপ দিতে হবে, যা ঘটনাটি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেবে। ভবিষ্যতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হলে তা উল্লেখ করা যেতে পারে।
নমুনা নিজস্ব প্রতিবেদন
প্রতিবেদন: রাজধানীর বায়ু দূষণ পরিস্থিতি
প্রতিবেদক: মো. সাইফুল ইসলাম
তারিখ: ২৮ অক্টোবর ২০২৩ভূমিকা
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রতিবেদনটির উদ্দেশ্য রাজধানীর বায়ু দূষণের প্রকৃত কারণ এবং এর প্রভাব বিশ্লেষণ করা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তথ্য সংগ্রহ
এই প্রতিবেদনের জন্য ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রধান সড়ক, শিল্পাঞ্চল এবং আবাসিক এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বিভিন্ন পরিবেশ সংস্থার রিপোর্ট এবং সেখানকার কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
ঘটনার বিশদ বিবরণ
ঢাকার বায়ুতে অতিরিক্ত ধূলিকণা এবং গাড়ির ধোঁয়ার কারণে দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, ঢাকার বায়ু দূষণের একটি বড় কারণ হচ্ছে নির্মাণ কাজ এবং যানবাহনের অতিরিক্ত ধোঁয়া। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প কারখানার নির্গত ধোঁয়া এবং রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ির কারণেও দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত
পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার বায়ু দূষণ রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু কার্যকর বাস্তবায়নের অভাবে সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি।
প্রভাব ও সুপারিশ
বায়ু দূষণের কারণে রাজধানীর মানুষ বিশেষ করে শিশুরা শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, এবং হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।
নিজস্ব প্রতিবেদনে নির্ভুল তথ্য উপস্থাপনের জন্য সাংবাদিক বা প্রতিবেদকের উচিত তথ্যের সত্যতা যাচাই এবং বাস্তবসম্মতভাবে বর্ণনা করা।
একটি ভালো প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য
একটি ভালো প্রতিবেদন তৈরি করতে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য অবশ্যই থাকতে হবে। নিচে সেগুলো নির্দিষ্ট আকারে উল্লেখ করা হলো:
- আকর্ষণীয় শিরোনাম: প্রতিবেদনটির শিরোনাম এমন হতে হবে যা পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেয়।
- গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল ও সংক্ষিপ্ত: প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল হতে হবে, এবং সেই সাথে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
- সুনির্দিষ্ট, সুনির্বাচিত ও নির্ভূল তথ্য: প্রতিবেদনের সমস্ত তথ্য অবশ্যই সঠিক এবং নিরপেক্ষ হতে হবে, যাতে পাঠক বিভ্রান্ত না হন।
- সম্পূর্ণতা: প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ এবং বিস্তারিতভাবে তথ্য উপস্থাপন করবে। ভাষা হবে সহজ, সরল, প্রাঞ্জল এবং সাবলীল।
- শিরোনাম ও মূল প্রতিবেদনের তথ্যের সামঞ্জস্য: শিরোনামের সঙ্গে মূল প্রতিবেদনের তথ্যের সঠিক মিল থাকা উচিত।
- মতামত, সুপারিশ বা ভবিষ্যৎবাণী এড়ানো: প্রতিবেদনটিতে কোনো প্রকার অগ্রিম মতামত, সুপারিশ বা ভবিষ্যৎবাণী প্রদান করা উচিত নয়, বরং তথ্য ভিত্তিক হওয়া উচিত।