জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
একনজরে বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৭ মার্চ, ১৯২০ তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের বাইগার নদীর তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ লুৎফর রহমান এবং শেখ সায়রা খাতুনের ঘরে জন্ম নেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকনাম ছিল খোকা। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয় ছিলেন। মৃত্যু: ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ (২৯ শ্রাবণ, ১৩৮২ বঙ্গাব্ধ)
১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে পালিত হয়৷
- বঙ্গবন্ধু (১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ প্ৰদত্ত),
- জাতির জনক (১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ ডাকসু ভিপি আ.স.ম আব্দুর রব প্রদত্ত)
- রাজনীতির কবি বা Poet of Politics (১৯৭১ সালের এপ্রিলে ‘নিউজ উইক’ ম্যাগাজিন প্রদত্ত)
- বিশ্ববন্ধু (১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রদত্ত)
- হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি (২০০৪ সালের বিবিসির শ্রোতা জরিপ)
- অসমাপ্ত আত্মজীবনী (The Unfinished Memoirs)
- কারাগারের রোজনামচা
- আমার দেখা নয়া চীন
- আমার কিছু কথা
বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী
- নাম: শেখ মুজিবুর রহমান
- জন্ম: ১৭ই মার্চ ১৯২০ সালে (৩ চৈত্র, ১৩২৬ বঙ্গাব্দ), ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে।
- পিতা: শেখ লুৎফর রহমান
- মাতা: শেখ সায়রা খাতুন
- ডাকনাম: খোকা
- উচ্চতা: ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি
- স্ত্রীঃ শেখ ফজিলাতুন্নেছা (রেণু)
- সন্তান: ২ মেয়ে ও ৩ ছেলে। যথাক্রমে- শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল।
- ১৯২৭ সালে ৭ বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর পাঠ শুরু করেন।
- স্কুলজীবনে বঙ্গবন্ধু বেরিবেরি (ভিটামিন B1 এর অভাবে হয়) রোগে ও চোখের গুকোমা রোগে আক্রান্ত হন।
- তার গৃহশিক্ষক আব্দুল হামিদ ছিলেন ব্রিটিশ আন্দোলনের কর্মী। তার হাতেই শেখ মুজিবের রাজনীতির হাতেখড়ি।
- তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) থেকে ১৯৪৭ সালে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে বি.এ পাস করেন। বেকার হোস্টেল ছিল তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজের মুসলিম শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস। বঙ্গবন্ধু এই ছাত্রাবাসের ২৪ নম্বর কক্ষে ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন৷
- বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনে সর্বমোট ৪৬৮২ দিন কারাভোগ করেন।
- বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের স্মৃতি নিয়ে দুর্লভ আলোকচিত্র সম্বলিত বই ‘৩০৫৩ দিন’।
- ১৯৩৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা একে ফজলুল হক এবং শ্রম, বাণিজ্য ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জে যান। সেখানে বঙ্গবন্ধু স্কুলের ছাত্রাবাস সংস্কারের দাবি জানান।
- ১৯৩৯ সালে গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগ গঠন করেন। তিনি নিজে মুসলিম ছাত্রলীগের সম্পাদক হয়েছিলেন।
- ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। ১ বছরের জন্য কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
- ১৯৪৩ সালে মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
- ১৯৪৫ সালে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
- ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ফজলুল হক মিলনায়তনে নাজমুল করিমের সভাপতিত্বে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
- ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন এবং যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
- ১৯৫৩ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক হন।
- ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন।
- ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭ আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে বিজয়ী হয়। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে বিজয়ী হন।
- ১৯৫৪ সালের ১৪ মে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় কৃষি, ঋণ, সমবায় ও পল্লী উন্নয়নবিষয়ক এবং সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷
- ১৯৫৫ সালের ৫ জুন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
- ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের (আতাউর রহমান সরকারের) শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড মন্ত্রী হন৷
- ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর বাসভবনে ঐতিহাসিক ৬ দফা পেশ করেন।
- ১৯৬৬ সালের ১ মার্চ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৩ মার্চ, ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ‘ছয় দফাকে’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।
- ১৯৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্থাৎ ১৬৯টির মধ্যে ১৬৭ আসন লাভের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সমগ্র পাকিস্তানের নেতা হয়ে ওঠেন।
- ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক যুগান্তকারী ভাষণে ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণে স্পষ্ট হয়ে যায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
- ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন
- “This may be my last message, from today Bangladesh is independent….. ‘
- ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
- ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
- ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ নতুন সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতির জনকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০টির মধ্যে ২৯৩ আসনে বিজয়ী হন।
- ১৯৭৩ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।
- ১৯৭৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ, সিপিবি ও ন্যাপের সমন্বয়ে ত্রিদলীয় ঐক্যজোট গঠন করেন।
- ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পুনরায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন৷
- ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির এক ডিক্রির মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল)’ নামে একটি নতুন একক রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে সামরিক বাহিনীর কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু শহীদ হন। জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুকে সমাহিত করা হয় ৷
বঙ্গবন্ধুর শাসনামল
- ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়।
- ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার আগে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিশেষ বিমানে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয়।
- ব্রিটিশ রাজকীয় কমেট বিমানে বঙ্গবন্ধু দিল্লি হয়ে ঢাকায় আসেন।
- স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরদিনই ১৯৭২ সালের ১১ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ‘অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন।
- ‘অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারির মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
- ১৯৭২ সালের ১২ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
- আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টি বঙ্গবন্ধুকে গণপরিষদের দলীয় নেতা নির্বাচন করে।
- ১৯৭২ সালের ২৩শে মার্চ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সরকার ‘গণপরিষদ আদেশ জারি করে।
- ১৯৭২ সালের ২৬শে মার্চ থেকে এই আদেশটি কার্যকর করা হয়৷
- ১৯৭২ সালের ১০ই এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে।
- ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর বাংলাদেশের সংবিধান সর্ব প্রথম গণপরিষদে উত্থাপিত হয়।
- সংবিধান প্রণয়ন গণপরিষদের একমাত্র কাজ ছিল।
- ১৯৭২ সালের ১০ই এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে সংবিধান প্রণয়নে খসড়া কমিটি গঠন করা হয়৷
- ড. কামাল হোসেন এই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন, কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৪ জন৷
- বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির একমাত্র মহিলা সদস্য বেগম রাজিয়া বানু।
- ৪ নভেম্বর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। এজন্য ৪ নভেম্বরকে বাংলাদেশের সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
- বাংলাদেশের সংবিধানে ১টি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ, ১৫৩টি অনুচ্ছেদ এবং ৭টি তফসিল রয়েছে।
- চারটি আদর্শকে অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ১৯৭২ সালের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
- ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী গৃহীত হয় ৷
- বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর উদ্দেশ্য ছিল ৯৩ হাজার যুদ্ধবন্দীর বিচার অনুষ্ঠান।
■ বঙ্গবন্ধুর কৃষি ও শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নয়ন
- বঙ্গবন্ধু ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফসহ পূর্বের সমস্ত বকেয়া মওকুফ করে দেন।
- ১০০ বিঘা পর্যন্ত একটি পরিবারের সর্বাধিক জমির মালিকানা নির্ধারণ করেন।
■ শিক্ষা ব্যবস্থায় গৃহীত পদক্ষেপ
- সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে প্রথমবারের মতো জাতীয়করণ করেন।
- সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের জন্য জাতীয় সংসদে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়।
- ১৯৭২ সালের ২৬শে জুলাই বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে প্রথম জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়।
- ১৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য হিসেবে যোগদান করে।
- ১৯৭৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ দেন৷
- স্বাধীনতা লাভের স্বল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার সাধারণ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
- ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
- আওয়ামী লীগ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম নেতা।
- ৭ এপ্রিল, ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়।
- ১৯৭২ সালে প্রথম বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন যুক্ত হয়।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রথম প্রধানমন্ত্ৰী।
- সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ (বাকশাল) গঠন করা হয়।
- ১৯৭৫ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান অন্যান্য রাজনৈতিক দল ভেঙ্গে দিয়ে বাকশাল গঠন করেন।
- বঙ্গবন্ধু বাকশালের সভাপতি এবং এম মনসুর আলী সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
- দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যরা হত্যা করে।
- ঘাতক মেজর ফারুক, রশিদ, মহিউদ্দিন, মেজর পাশা, মেজর নূর ও আরো কিছু বিপথগামী সেনার নেতৃত্বে ১৫ই আগস্ট ভোরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
- ১৫ আগস্ট ভোর রাত পর্যন্ত মেজর K M Shafiullah প্রধান সেনাপতি ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর সাহিত্যচর্চা
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ (The Unfinished Memoirs) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। জুন, ২০১২ এটি প্রকাশিত হয়। এর ইংরেজি অনুবাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তাঁর আত্মজীবনী লিখতে পেরেছিলেন। তিনি এ গ্রন্থ কাউকে উৎসর্গ করে যাননি। এ গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা এবং প্রচ্ছদ তৈরি করেন সমর মজুমদার। ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ থেকে সংকলিত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ঘটনাগুলো নিয়ে বায়ান্নর দিনগুলো শীর্ষক একটি গদ্য উচ্চ মাধ্যমিকের নতুন বাংলা বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ফরিদপুর কারাগারে অনশনরত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী ছিলেন মহিউদ্দিন আহমদ।
‘কারাগারের রোজনামচা’ বঙ্গবন্ধুর লেখা দ্বিতীয় বই। ১৭ মার্চ, ২০১৭ বাংলা একাডেমি বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে। ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামটির প্রস্তাবক শেখ রেহানা। এ গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা এবং প্রচ্ছদ তৈরি করেন তারিক সুজাত। ড. ফকরুল আলম এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুর কারাস্মৃতি (১৯৬৬-৬৮ খ্রি.) তুলে ধরা হয়েছে।
‘আমার দেখা নয়া চীন’ বঙ্গবন্ধুর লেখা তৃতীয় বই। ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বাংলা একাডেমি বইটি প্রকাশ করে।
‘আমার কিছু কথা’ মুক্তিযুদ্ধের ওপর লিখিত বঙ্গবন্ধুর অমর গ্ৰন্থ।
পদক ও সম্মাননা
- ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে আগরতলায় রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনকে আসামি করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করে এবং অভিযুক্ত সকলকে গ্রেপ্তার করে।
- গণতন্ত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন, পূর্ণ বাস্তবায়ন, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আওয়ামী লীগ ১৯৬৯ সালে সারাদেশে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলে।
- ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাবির ইতিহাস বিভাগের ছাত্র আসাদুজ্জামান শহীদ হন। ২৪ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে মতিউর রহমান শহীদ হন।
- ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহরুল হক ও ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা শহীদ হলে সারাদেশে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়।
- প্রচন্ড গণআন্দোলনের মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হয় এবং সকল বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়।
- এ উপলক্ষ্যে ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় এবং এ অনুষ্ঠানে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষে ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান করেন।
- বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ হতে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ‘অসহযোগ আন্দোলন’ পরিচালিত হয়।
- ২রা মার্চ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ডাকসু ভিপি আ.স.ম. আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে পতাকা উত্তোলন করেন।
- ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এদিন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করে এবং তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ.স.ম আবদুর রব বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক উপাধিতে ভূষিত করেন।
বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে “জুলিও কুরি শান্তি পদক’ এ ভূষিত করে। ২৩ মে, ১৯৭৩ সালে ঢাকায় বিশ্বশান্তি পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এশিয়া শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ‘জুলিও কুরি’ পদক লাভ করেন।
- ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে মার্কিন সাপ্তাহিক ‘Newsweek’ এর সাংবাদিক লোবেন জেঙ্কিন্স তার প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি (Poet of Politics) বলে আখ্যায়িত করেন।
- ১৯৯৪ সালে ঢাকার ধানমন্ডির ৩২নং বাড়িটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়৷
- ১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষটি ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ’ হিসেবে
- সংরক্ষণ করা হয়।
- ২০০৪ সালে বিবিসির শ্রোতা জরিপে বঙ্গবন্ধু ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ নির্বাচিত হন।
- সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২১ জুন, ২০০৯ বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে রায় দেয়।
- ২০১১ সালে বেকার হোস্টেলের নবনির্মিত বর্ধিত ভবনকে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতিভবন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
- ২০১৭ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লির পার্ক স্ট্রিটের নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রোড’ করা হয়।
- কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২০২০ সালে ‘বঙ্গবন্ধু মেডাল ফর ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স’ প্রবর্তন করা হয়।
পাকিস্তান আমলের ইতিহাস।
পাকিস্তান আমলের ইতিহাস
- ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সালে স্বাধীন সার্বভৌম পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
- চৌধুরী রহমত আলী কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন ‘পাকিস্তান’ নামটির কথা প্রথম উল্লেখ করেন।
- মুহাম্মদ আলী জিন্নার দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
- পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
- লিয়াকত আলী খান পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
- ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট।
- ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে ঢাকার রোজ গার্ডেনে এক রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়।
- পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শামসুল হক এবং যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
- অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালে ২১- ২২ অক্টোবর তৃতীয় সম্মেলনে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়।
- পাকিস্তান শাসনামলে ভূমি আইনের উপর প্রণীত গুরুত্বপূর্ণ বিধিবদ্ধ আইন ১৯৫০ সালের জমিদারি দখল ও প্রজাস্বত্ব আইন (Estate Acquisition and Tenancy Act 1950)। আইনটি ১৯৫০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলার আইনসভা কর্তৃক গৃহীত হয়।
- পূর্ববঙ্গ প্রদেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন খাজা নাজিমুদ্দীন।
- খাজা নাজিমুদ্দীনের পর ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন নূরুল আমীন।
- শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে ৪ এপ্রিল ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়।
- পূর্ব পাকিস্তান যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক।
- ৩০ মে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল ঘোষণা করা হয়।
- ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ পূর্ব বাংলার নাম পূর্ব পাকিস্তান করা হয়।
ভাষা আন্দোলন
- পাকিস্তান রাষ্ট্রের মোট জনগোষ্ঠীর ৫৬% বাংলা ভাষী এবং 3.২৭% ছিল উর্দু ভাষী।
- শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
- চৌধুরী খালিকুজ্জামান এবং আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দেন।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং ড. মুহাম্মদ এনামুল হকসহ বেশ ক’জন বুদ্ধিজীবী প্রবন্ধ লিখে প্রতিবাদ জানান। এ সময়ে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ একটি ভাষণে বলেছিলেন, “আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি।”
- মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবমাননা বাঙালির মনকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানিদের হাতে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি কিছুই নিরাপদ নয়। এ প্রেক্ষাপটেই বাঙালির মাঝে জাতীয়তাবাদের বীজ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা বপিত হয়।
- ভাষা আন্দোলনের প্রথম সংগঠন তমদ্দুন মজলিশ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সংগঠন।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিশ গঠিত হয়।
- তমদ্দুন মজলিশের উদ্যোগে প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনের প্রথম পুস্তিকা ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু।
- ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে ইংরেজির পাশাপাশি উর্দু ভাষায় কার্যক্রম শুরু করা হয়।
- ইংরেজির পাশাপাশি উর্দুতে কার্যক্রম শুরু হলে পূর্ব বাংলা কংগ্রেস পার্টির সদস্য কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এর প্রতিবাদ করেন।
- ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকেও গণপরিষদের অধিবেশনের অন্যতম ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। কিন্তু এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়।
- রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নতুন কমিটির আহ্বানে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ধর্মঘট পালিত হয়। এ দিনটি ছিল পাকিস্তানের ভাষা দিবস। ১৯৪৮-৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় ১১ মার্চ ভাষা দিবস পালন করা হত।
- আন্দোলনকারীরা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার দাবি করছিল।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল হক, অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুবসহ অনেককেই আন্দোলন চলাকালে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালের ১৩-১৫ই মার্চ দেশের সর্বত্র ধর্মঘট পালিত হয়।
- মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৫ই মার্চ আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসেন ৷
- পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ১৯শে মার্চ ঢাকায় আসেন।
- তিনি ২১শে মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এবং ২৪শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে কার্জন হলে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য দুটিতে তিনি বলেন ‘উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ (Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan) উপস্থিত ছাত্ররা ‘না না’ ধ্বনি দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করে।
- প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ১৯৪৮ সালের ১৮ই নভেম্বর আবার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন ৷
- প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি পল্টন ময়দানে ঘোষণা দেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এ ঘোষণার প্রেক্ষিতে ভাষা আন্দোলন নতুন করে শুরু হয়ে যায় এবং সর্বাত্মক রূপ ধারণ করে।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ৩০শে জানুয়ারি ১৯৫২ সালে ছাত্র ধর্মঘটের আহ্বান করে।
- ৩১শে জানুয়ারি ১৯৫২ সালে ভাসানীর সভাপতিত্বে রাজনৈতিক দলের সর্বদলীয় সভায় ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।
- সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ একুশে ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
নাম | গঠন | আহ্বায়ক |
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ | ১ অক্টোবর, ১৯৪৭ | এএসএম নুরুল হক ভূঁইয়া |
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ (দ্বিতীয়বারের মতো গঠিত) | ২ মার্চ, ১৯৪৮ | শামসুল আলম |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বা কমিটি
| ১১ মার্চ, ১৯৫০ | আবদুল মতিন |
সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বা কমিটি | ৩১ জানুয়ারি, ১৯৫২ | কাজী গোলাম মাহবুব |
- প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীনের নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে।
- ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের বৈঠক বসে। এ সভায় আবদুল মতিন, অলি আহাদ, গোলাম মাহবুব প্রমুখ নেতা ১৪৪ ধারা অমান্য করার সিদ্ধান্ত নেয়।
- ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রদের সভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সভায় ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন।
- ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে আবদুস সালাম, আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমেদ, আবদুল জব্বার ঘটনাস্থলে শহীদ হন। রফিক বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ।
- পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারি শোভাযাত্রা বের হলে পুলিশ পুনরায় গুলিবর্ষণ করে। এতে শফিউর রহমান মৃত্যুবরণ করেন।
- ছাত্ররা ২৩শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনকারীরা যেখানে শহীদ হয়েছিল সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ বা শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। শহীদ শফিউরের পিতা শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলে।
- ১৯৬৩ সালে অস্থায়ী শহীদ মিনারের স্থলে শিল্পী হামিদুর রহমানের নকশা ও পরিকল্পনায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন শহীদ বরকতের মা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এটি পুনঃনির্মাণ করা হয়।
- ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য বাংলা একাডেমি চত্বরে অবস্থিত ‘মোদের গরব’ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ‘অমর একুশে।
- ৯ মে ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদে এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ সালে জাতীয় পরিষদে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
- ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ সালে বাংলা পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়৷
- ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার।
- ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল ৮ ফাল্গুন ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ।
- ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত প্রথম নাটক মুনীর চৌধুরীর ‘কবর”।
- ভাষা আন্দোলনের উপর রচিত প্রথম উপন্যাস জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন।
- একুশের প্রথম গান ‘ভুলব না, ভুলব না একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না’-এর রচয়িতা ভাষাসৈনিক আ ন ম গাজীউল হক।
- ভাষা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দীন।
- একুশের প্রথম কবিতা ‘আমি কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ লেখেন মাহবুবুল আলম চৌধুরী।
- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি রচনা করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী।
- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটির প্রথম সুরকার আব্দুল লতিফ ও বর্তমান সুরকার আলতাফ মাহমুদ।
- ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’ গানটির রচয়িতা ও সুরকার আব্দুল লতিফ।
- ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ গানটির রচয়িতা আব্দুল লতিফ।
- ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটির গীতিকার ফজল-এ- খোদা ও শিল্পী আব্দুল জব্বার।
- কানাডায় ভ্যাঙ্কুভার-এ বসবাসরত Mother Language Lover of the World নামের একটি বহুভাষী ও বহুজাতিক ভাষাপ্রেমী গ্রুপ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নেতৃত্বে ছিলেন প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও তাঁর সহযোগী আব্দুস সালাম।
- তারা বাঙালির ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত পটভূমি তুলে ধরেন যা সারা পৃথিবী জুড়ে অনন্য। তারা ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানান৷
- ইউনেস্কো বাংলাদেশের প্রস্তাবটি মেনে নিয়ে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ঢাকার সেগুনবাগিচায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
- ২০০০ সাল থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে।
- পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ‘সিয়েরা লিওন’ বাংলা ভাষাকে তাদের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন
- ১৯৫৩ সালের ১৪ই নভেম্বর ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়৷
- চারটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। যুক্তফ্রন্টের দলগুলো হলো মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ, শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হকের কৃষক-শ্রমিক পার্টি, মওলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম পার্টি, হাজী দানেশের বামপন্থী গণতন্ত্ৰী দল।
- পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক ও তার দোসরদের শোষণের বিরুদ্ধে এক ‘ব্যালট বিপ্লব’ ছিল ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন৷
- নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল নৌকা।
- আওয়ামী মুসলিম লীগের নির্বাচনী কর্মসূচির ৪২ দফার প্রধান প্রধান দফা নিয়ে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।
- ২১ দফার ১ম দফা ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
- ২১ দফার প্রধান দফাগুলো হলো পাটশিল্পকে জাতীয়করণ, সমবায় কৃষিব্যবস্থা প্রবর্তন, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান, ১৯৪০-এর লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব বাংলাকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্ৰদান।
- ১০ মার্চ ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
- পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক গণপরিষদের আসন সংখ্যা ছিল ৩০৯টি (মুসলিম আসন ২৩৭ এবং অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত ৭২ টি) ।
- ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন লাভ করে।
- ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি, মুসলিম লীগ ৯টি, খেলাফত রব্বানী ১টি ও স্বতন্ত্র ৪টি আসন লাভ করে।
- ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক নির্বাচনে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
- মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের ১৪ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি, সমবায় ও পল্লি উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্ব লাভ করেন। বঙ্গবন্ধু মাত্র ৩৪ বছর বয়সে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের মত মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
- ৩০ মে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট প্রাদেশিক সরকারকে বাতিল করা হয়। গভর্নর জে: গোলাম মোহাম্মদ যুক্তফ্রন্টের প্রাদেশিক সরকারকে বাতিল করেন। যুক্তফ্রন্ট সরকার মাত্র ৫৬ দিনের সরকার ছিল।
- ১৯৫৬ সালের ৯ জানুয়ারি গণপরিষদে ‘পাকিস্তান শাসনতন্ত্র বিল’ উত্থাপিত হয়।
- ২৩ মার্চ ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়। এর ফলে পাকিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে। পূর্ব বাংলার নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান’ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো একত্র করে নাম দেয়া হয় ‘পশ্চিম পাকিস্তান’।
- পাকিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন ইস্কান্দার মির্জা।
- ১৯৫৬ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ রিপাবলিকান কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়।
- এ সরকারের মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
- ১৯৫৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে ‘কাগমারী সম্মেলন’
- অনুষ্ঠিত হয়।
- মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধান অতিথি ছিলেন।
- ভাসানী পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন। পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর বণিবনা না হওয়ায় ১৮ মার্চ ১৯৫৭ সালে ভাসানী আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ ছেড়ে ঐ বছর (National Awami Party-NAP) গঠন করেন।
সামরিক শাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন
- ১৯৫৬ সালের ২৩শে মার্চ জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট মনোনীত হন।
- ইস্কান্দার মির্জা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করেন।
- পূর্ব বাংলা আইন পরিষদে বিরোধী দল কৃষক-শ্রমিক পার্টির আক্রমণে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী মাথায় আঘাত পেয়ে নিহত হন। এ সুযোগে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা ৭ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করেন।
- ২৭ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন।
- জেনারেল আইয়ুব খান ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ নামে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করেন।
- আইয়ুব খান ১৯৫৯ সালে মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের আদেশ জারি করেন।
- জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৬০ সালে মৌলিক গণতন্ত্রের আস্থা ভোটে পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।
- ১৯৬২ সালের আগস্ট মাসে শরিফ কমিশনের শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে ছাত্র আন্দোলন হয়।
- ১৭ই সেপ্টেম্বর হরতাল পালনকালে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন ছাত্র নিহত এবং কয়েকশ’ ছাত্র আহত হয়। এ আন্দোলনের ফলে শরিফ কমিশনের সুপারিশ স্থগিত হয়। এই আন্দোলন ছিল স্বৈরাচার আইয়ুব বিরোধী প্রথম আন্দোলন।
- ১৭ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ‘শিক্ষা দিবস’।
- ১৯৬৬ সালের ৫-৬ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধীদলীয় নেতারা একটি সম্মেলনের আহ্বান করেন। সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা’ কর্মসূচি পেশ করেন।
- পাকিস্তানি শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
- বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্য ছিল ছয় দফা দাবি আদায়ের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা করা।
- ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘ছয় দফা: আমাদের বাঁচার দাবি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৩ মার্চ, ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ‘ছয় দফাকে’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।
- স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ে ভূমিকার জন্য ‘ছয় দফা’ কে বাঙালির মুক্তির সনদ বা Magna Carta বলে চিহ্নিত করা যায়। এ কর্মসূচির ৩টি দফা ছিল অর্থনীতি বিষয়ক।
- ছয় দফার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য হলো এর মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণার বিকাশ হয়। ছয় দফা মূলত এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির কর্মসূচি যার মূল বক্তব্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন।
- বিচার ব্যবস্থা সংক্রান্ত কোন বিষয় ৬-দফার অন্তর্ভুক্ত ছিলনা।
- ৬-দফার ১ নম্বর দফা হলো প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন।
- ৬-দফার ৬ নম্বর দফা হলো অঙ্গরাজ্যগুলো আঞ্চলিক প্রতিরক্ষার জন্য মিলিশিয়া বা প্যারামিলিটারি বাহিনী গঠন।
- ৬ দফা কর্মসূচির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৭ জুন পূর্ববাংলায় হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে এ আন্দোলনের প্রথম শহীদ মনুমিয়া সহ অনেকে নিহত হন।
- প্রতি বছরের ৭ জুন ৬-দফা দিবস পালিত হয়।
- শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রকৃতি: পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীনে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার হবে। প্রদেশগুলোর পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন থাকবে।
- কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা: কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়। অন্যান্য বিষয় থাকবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে।
- মুদ্রা বা অর্থ সম্পর্কীত ক্ষমতা: দেশের দুই অঞ্চলের জন্য সহজে বিনিময়যোগ্য দুটি মুদ্রা চালু থাকবে।
- সকল প্রকার রাজস্ব ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে।
- বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রদেশগুলোর হাতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকেব।
- প্রদেশগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আধা সামরিক বাহিনী গঠন করার ক্ষমতা দেওয়া হবে।
- সামরিক বাহিনীর কিছু সংখ্যক সদস্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলাকে বিচ্ছিন্ন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের এক প্রচেষ্টা গ্রহণ করে যা সংগঠনের সদস্যদের অসতর্কতার ফলে পাকিস্তান সরকারের কাছে ফাঁস হয়ে পড়ে।
- ৩ জানুয়ারি ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবকে ১নং আসামি করে ঢাকায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ছিলেন ৩৫ জন।
- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার নাম ছিল ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য’।
- আগরতলা হলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী।
- ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলার ১৭নং আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে পূর্ব পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় কারাগারের সেলের দরজায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
- Special Tribunal-এ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। এ মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে Prosecutor (কৌসুলি) ছিলেন বৃটিশ ব্যারিস্টার Sir William Thomas।
- গণতন্ত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আওয়ামী লীগ সারাদেশে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলে।
- স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্ররা আওয়ামী লীগের ৬ দফাসহ মোট ১১ দফা দাবি নিয়ে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু করে।
- ২০ জানুয়ারি গণ আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে ঢাবির ইতিহাস বিভাগের ছাত্র আসাদুজ্জামান শহিদ হন। তার স্মরণে ২০ জানুয়ারি ‘আসাদ দিবস’ পালিত হয়। তাঁর নামে আইয়ুব গেটের নাম আসাদ গেট করা হয়। কবি শামসুর রহমান তাঁর স্মরণে ‘আসাদের শার্ট’ কবিতা লেখেন।
- ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে নবকুমার ইনস্টিটিউটের ছাত্র মতিউর রহমান নিহত হন। তার স্মরণে বঙ্গভবনের সামনের উদ্যানের নাম ‘মতিউর রহমান শিশু উদ্যান’ করা হয়। ২৪ জানুয়ারি গণ-অভ্যুত্থান দিবস।
- ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আগতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়।
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘৬৯ এ শহীদ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা।
- প্রচন্ড গণআন্দোলনের মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হয় ও বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়।
- ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষে তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান করেন।
- ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান আগা মুহম্মদ ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং আইয়ুব খানের ক্ষমতা হস্তান্তর ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যক্ষ ফলাফল ছিল।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালে পূর্ব বাংলার নতুন নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’।
১৯৭০ এর নির্বাচন
- ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ১৯৬৯ ক্ষমতা গ্রহণের পর নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং ‘আইনগত কাঠামো আদেশ জারির মাধ্যমে নির্বাচনের শর্তসমূহ উল্লেখ করেন।
- আইনগত কাঠামো আদেশে জাতীয় পরিষদের আসন বিন্যাস ছিল সংরক্ষিত ১৩টি মহিলা আসন সহ ৩১৩টি আসন এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সংরক্ষিত ৭টি সহ ১৬৯টি আসন বরাদ্দ করা হয়।
- পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে আসন সংখ্যা ছিল ৩১০টি (সংরক্ষিত ১০টি) ।
- ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ (কিছু আসনে ১৭ জানুয়ারি ১৯৭১) পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
- ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়।
- পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত ৭টি সহ ১৬৭টি আসন লাভ করে।
- প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ ৩১০টি আসনের মধ্যে ২৯৮ আসন লাভ করে (সংরক্ষিত ১০টি সহ)।
- এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তানে এবং পিপিপি পূর্ব পাকিস্তানে কোন আসন লাভ করেনি।
- বিচারপতি আবদুস সাত্তার ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন।
আইনসভার আসন বিন্যাস | নির্বাচিত আসন | সংরক্ষিত আসন | মোট আসন |
জাতীয় পরিষদ | ৩০০ | ১৩ | ৩১৩ |
পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ | ১৬২ | ৭ | ১৬৯ |
আওয়ামী লীগের অবস্থান | ১৬০
| ৭ | ১৬৭ |
পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ | ৩০০ | ১০ | ৩১০ |
আওয়ামী লীগের অবস্থান | ২৮৮ | ১০ | ২৯৮ |
৭১’র মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট
- ১৯৭০-৭১ সালের নির্বাচনের পর ইয়াহিয়া মন্তব্য করেন ১২০ দিনের মধ্যে পাকিস্তানের সংবিধান রচনা করা হবে, তবে এটা ছিল রাজনৈতিক প্রতারণা।
- ২৭ জানুয়ারি ১৯৭১ সালে ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সাথে ঢাকায় দেখা করে কোয়ালিশন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। ভুট্টোর এই অন্যায্য প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু প্রত্যাখ্যান করেন ।
- ২৭শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য আসতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ হতে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ‘অসহযোগ আন্দোলন’ পরিচালিত হয়।
- ৩ মার্চ হরতাল চলাকালে পুলিশের গুলিতে শঙ্কু সমজদার নিহত হন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ।
- ২রা মার্চ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ডাকসু ভিপি আ.স.ম. আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে পতাকা উত্তোলন করেন। তাই ২রা মার্চ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দিবস।
- ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এদিন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করে এবং তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ.স.ম আবদুর রব বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির জনক’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
- ২৩শে মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় দিবস আওয়ামী লীগ প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করে। এদিন বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডির ৩২নং বাসবভনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং দেশের সর্বত্র লাল-সবুজের পতাকা উড়ানো হয়।
- ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু ১৮ মিনিটের এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন বাঙালির হাজার বছরের চাওয়া-পাওয়া, দুঃখকষ্টের কথা। বিকাল ৩ ঘটিকায় রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চের ভাষণ শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে দাবি ছিল ৪টি।
- ৭ মার্চের ভাষণ চলাকালে পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন চলছিল। ৭ই মার্চ ভাষণের পর অসহযোগ আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
- ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ উক্তিটি ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালের ভাষণের অংশ।
- ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জ্যাকব ফিল্ড রচিত “We shall fight on the beaches: The speeches that inspired history.” শীর্ষক গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ সংকলিত হয়েছে ।
- ৭ই মার্চের ভাষণের উপর ভিত্তি করে ফখরুল আমিনের পরিচালনায় প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য স্পিচ’ নির্মিত হয়।
- ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবর ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’ এ অন্তর্ভুক্ত করে।
- ওয়াশিংটন ভিত্তিক ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’ ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুকে ‘Poet of Politics’ বা রাজনীতির কবি আখ্যা দেয়।
- অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার,
- সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া,
- গণহত্যার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা এবং
- নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
“আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সাথে দেখা করেছি। আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে তাকে অনুরোধ করলাম, ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। …………
টেলিফোনে আমার সাথে তার কথা হয়। তাকে আমি বলেছিলাম, জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কীভাবে আমার গরিবের উপর, আমার মানুষের বুকের উপর গুলি করা হয়েছে। কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে, কী করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন।…..
যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয় তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। …..
রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো, এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।”
- মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে ২৫শে মার্চ গণহত্যায় ঢাকা শহরের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়।
- ইয়াহিয়ার সামরিক উপদেষ্টা টিক্কা খান এবং রাও ফরমান আলী ১৮ই মার্চ নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিচালনার নীলনকশা তৈরি করেন এবং ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর মাধ্যমে ঢাকা শহরের ঘুমন্ত মানুষের ওপর হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেন।
- নীলনকশা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ১৯শে মার্চ বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্রীকরণ শুরু হয়।
- ১৯ই মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ইবিআর (ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) গাজীপুরের জয়দেবপুরে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
- ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে চলমান গণহত্যার রিপোর্ট বহির্বিশ্বে প্রকাশ করেন।
- ২০১৭ সাল থেকে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
- স্বাধীনতার ঘোষক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত বারোটার পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ধানমন্ডি ৩২নং বাসভবন হতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
- বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ই.পি. আরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে।
- ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
- ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
- মুজিব নগরে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানে সংযোজন হয়।
- ‘লোকটি (বঙ্গবন্ধু) ও তার দল (আওয়ামী লীগ) পাকিস্তানের শত্রু, এবার তারা শাস্তি এড়াতে পারবে না’ ইয়াহিয়া খান এ নিকৃষ্ঠ উক্তিটি করেন।
মুজিবনগর সরকার গঠন
- ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার গঠন করা।
- ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে এবং গণপ্রজাতন্ত্রের ঘোষণা করে।
- মুজিবনগর সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার (মুজিবনগর) আমবাগানে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জনাব আব্দুল মান্নান।
- অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
- মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী সচিবালয় ৮নং থিয়েটার রোড, কলকাতায় অবস্থিত ছিল।
- ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার কর্তৃক প্রকাশিত পত্রিকার নাম সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা।
- মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ছিল মুজিবনগর (১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত)।
- মুজিব নগর সরকার সামরিক ও বেসামরিক দুইভাবে কার্যক্রম চালায়।
- তানভির কবির মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের স্থপতি।
- মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন হোসেন তৌফিক ইমাম এবং মূখ্য সচিব ছিলেন রুহুল কুদ্দুস।
- বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর প্রধান ছিলেন কলকাতায় হোসেন আলী, দিল্লীতে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্যে (এবং বহির্বিশ্বে বিশেষ প্রতিনিধি) বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী এবং ওয়াশিংটনে এম আর সিদ্দিকী।
রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের ও সর্বাধিনায়ক | বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান |
উপ-রাষ্ট্রপতি | সৈয়দ নজরুল ইসলাম (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি)। |
প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ, অর্থনৈতিক বিষয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রী
| তাজউদ্দীন আহমদ |
অর্থ, বাণিজ্য এবং শিল্পমন্ত্ৰী | ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী |
স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন, কৃষি মন্ত্ৰী | এ. এইচ. এম কামারুজ্জামান |
পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী | খন্দকার মোশতাক আহমদ |
প্রধান সেনাপতি | কর্নেল (অব) এম.এ.জি. ওসমানী |
চিফ অব স্টাফ | কর্নেল (অব) আবদুর রব |
ডেপুটি চিফ স্টাফ | গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে. খন্দকার |
- ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে ৯ সদস্য বিশিষ্ট সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়৷
- সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদে ৫টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে।
- মওলানা ভাসানী ছিলেন সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান।
- বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে মুজিবনগর সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে বাংলাদেশ সরকারের মিশন স্থাপন করে।
- কলকাতাতেই প্রথম বাংলাদেশ মিশন স্থাপিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সামরিক প্রশাসন
- ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল তৎকালীন সিলেটের (বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার) তেলিয়াপাড়াতে মিলিত হয়ে সেনাবাহিনী, EPR (East Pakistan Rifles), আনসার ও পুলিশ বাহিনীর অফিসারগণ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত আক্রমণের কৌশল ঠিক করে। যুদ্ধের কমান্ড কাঠামো তেলিয়াপাড়াতে প্রণীত হয়।
- মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশলের নাম তেলিয়াপাড়া রণকৌশল।
প্রধান সেনাপতি | কর্নেল (অব.) এম. এ. জি. ওসমানী |
চিফ অব স্টাফ | লে. কর্নেল (অব.) আবদুর রব |
ডেপুটি চিফ অব স্টাফ | গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকার |
- ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইউনিট গুলোর বাঙালী সৈনিকদের নিয়ে নিয়মিত বাহিনী গঠিত হয়। সরকারিভাবে এদের এম.এফ (মুক্তিফৌজ) নামকরণ করা হয়।
- মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশকে ৪টি সামরিক জোনে ভাগ করে৷
- মুক্তিযুদ্ধকালে এপ্রিল ১২, ১৯৭১ সালে কোলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে ‘বাংলাদেশ বাহিনী’ গঠন করা হয়।
- মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ জুলাই বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরের ভাগ করা হয়।
- ১১ সেক্টরের পাশাপাশি ৬৪টি সাব-সেক্টর এবং তিনটি ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হয়।
সেক্টর | দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার | এলাকা |
১ | মেজর জিয়াউর রহমান মেজর রফিকুল ইসলাম | চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালী জেলার মুহুরী নদীর পূর্বাংশের সমগ্র এলাকা। |
২ | মেজর খালেদ মোশাররফ মেজর এটিএম হায়দার | কুমিল্লা, আখাউড়া-ভৈরব এবং ঢাকা শহর, ফরিদপুর ও নোয়াখালী জেলার অংশবিশেষ। |
৩ | মেজর কে এম শফিউল্লাহ মেজর এ এন নুরুজ্জামান | আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন থেকে পূর্ব দিকে কুমিল্লা জেলার অংশবিশেষ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ। |
৪ | মেজর সি আর (চিত্ত রঞ্জন) দত্ত ক্যাপ্টেন এ রব | সিলেটের পূর্বাঞ্চল, খোয়াই- শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন থেকে পূর্ব-উত্তর দিকে সিলেট- ডাউকি সড়ক। |
৫ | মেজর মীর শওকত আলী | সিলেটের পশ্চিম পশ্চিম এলাকা, সিলেট-ডাউকি সড়ক থেকে সুনামগঞ্জ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী অঞ্চল। |
৬ | উইং কমান্ডার এম কে বাশার
| ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী অঞ্চল ব্যতীত সমগ্র রংপুর জেলা ও দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ। |
৭ | মেজর নাজমুল হক। সুবাদার মেজর এ রব। মেজর কাজী নুরুজ্জামান। | সমগ্র রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও ছাড়া দিনাজপুরের অবশিষ্ট অংশ এবং ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকা ব্যতীত সমগ্ৰ বগুড়া ও পাবনা জেলা। |
৮ | মেজর আবু ওসমান চৌধুরী। মেজর এম এ মঞ্জুর। | সমগ্র কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা, ফরিদপুরের অংশবিশেষ এবং দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলার এলাকা। |
৯ | মেজর এম আব্দুল জলিল। মেজর এম এ মঞ্জুর। (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মেজর জয়নাল আবেদীন। | সাতক্ষীরা-দৌলতপুর সড়কসহ খুলনা জেলার সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল এবং বৃহত্তর বরিশাল পটুয়াখালী জেলা।
|
১০ | নৌবাহিনীর বাঙালি কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত | অভ্যন্তরীণ নৌপথ ও সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল-চট্টগ্রাম ও চালনা। ১০নং সেক্টরের দায়িত্বে ছিল নৌবাহিনী। |
১১ | মেজর এম আবু তাহের। স্কোয়াড্রন লিডার এম হামিদুল্লাহ। | ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা। |
সম্মুখ সমরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানী সেনাবাহিনী (ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) সদস্যদের নিয়ে তিনটি ব্রিগেড গঠন করেন। যথা-
ফোর্সের নাম | অধিনায়ক |
জেড ফোর্স | লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান |
এস ফোর্স | লে. কর্নেল কে. এম. সফিউল্লাহ |
কে ফোর্স | লে. কর্নেল খালেদ মোশাররফ |
- ঢাকা শহরের গেরিলা যোদ্ধাদের দলকে ক্র্যাক প্লাটুন বলা হত।
- ক্র্যাক প্লাটুনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ২নং সেক্টরের প্রধান কে-ফোর্সের অধিনায়ক খালেদ মোশাররফ।
- ৩০ আগস্ট ১৯৭১ সালে ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য সুরকার আলতাফ মাহমুদ, শাফী ইমাম রুমি, বদিউল আলম বদি, মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ, আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েল সহ আরও অনেকে হানাদার বাহিনীর নিকট ধরা পরে। পরবর্তীতে তাদের হত্যা করা হয়।
- ১৯৭১ সালে ভারত থেকে উপহার পাওয়া BNS-পদ্মা ও BNS-পলাশ নামে দুটি ছোট টহল গানবোট এবং বাঙালি অফিসার ও নাবিকদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী যাত্ৰা শুরু করে।
- ১৫ আগস্ট নৌ-পথে Operation Jackpot পরিচালনার মাধ্যমে মাত্র ১ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০টি ও মংলা বন্দরে ৫০টি জাহাজ ধ্বংস করে মুক্তিযোদ্ধা নৌ- কমান্ডারগণ সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দেন৷
- ৯ নভেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নৌ-বহর ‘বঙ্গবন্ধু নৌ-বহর’ উদ্বোধন করা হয়।
- ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠিত হয়৷
- ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের নিকটবর্তী অয়েল পাম্প এবং নারায়ণগঞ্জে বিমান হামলা চালানো হয় যা ‘অপারেশন কিলো ফ্লাইট’ নামে পরিচিত।
- স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার জন্য ক্যাপ্টেন ডা. সেতারা বেগম ও তারামন বিবিকে বীরত্বসূচক বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হয়।
- ডা. সেতারা বেগম ২নং সেক্টরে ও তারামন বিবি ১১নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেন।
- খেতাবহীন সুনামগঞ্জের খাসিয়া সম্প্রদায়ের মুক্তিযোদ্ধা হলো কাঁকন বিবি যিনি মুক্তিবেটি নামেও পরিচিত।
- বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত সর্বকনিষ্ঠ শিশু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ১১নং সেক্টরের যোদ্ধা শহিদুল ইসলাম লালু। এসময় তার বয়স ছিল ১৩ বছর।
- ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বীরবিক্রম খেতাব প্রদান করা হয় ৬নং সেক্টরের যোদ্ধা ইউ কে.চিং মারমাকে। তিনি ইপিআরের সদস্য হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেন।
- চট্টগ্রামে কালুরঘাটে প্রথম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়।
- ৩০ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদাররা বেতার কেন্দ্রটির উপরে বোমা হামলা করলে তা বন্ধ হয়ে যায়।
- এরপর কিছুদিন ত্রিপুরার আগরতলা থেকে ও ২৫ মে ১৯৭১ সাল থেকে কলকাতার বালিগঞ্জ থেকে সম্প্রচার শুরু হয়।
- স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জনপ্রিয় দুটি অনুষ্ঠান ছিল জল্লাদের দরবার ও চরমপত্র। চরমপত্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন এম.আর আখতার মুকুল।
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির অপতৎপরতা
- ৪ এপ্রিল ১৯৭১ সালে নুরুল আমিনের নেতৃত্বে, খাজা খয়ের উদ্দীন ও জামাতে ইসলামের গোলাম আজম টিক্কা খানের সাথে দেখা করে শান্তি কমিটি গঠনের পরামর্শ দেয়।
- ৯ এপ্রিল, ১৯৭১ ঢাকায় ১৪০ সদস্য নিয়ে ‘ঢাকা নাগরিক শান্তি কমিটি’ গঠিত হয়৷
- শান্তি কমিটি স্বাধীনতা বিরোধী প্রথম সংগঠন। খাজা খয়ের উদ্দীন শান্তি কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।
- জামায়াতের সাবেক আমীর যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম ও মৌলভি ফরিদ শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন।
- জামায়াত নেতা মাওলানা এ কে এম ইউসুফ এর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনার আনসার ক্যাম্পে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়।
- জামায়াতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র সংঘের সদস্য নিয়ে ১৯৭১ এর আগস্টে ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনী গঠিত হয় যাদের কার্যকলাপের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড অন্যতম ছিল।
- যুদ্ধপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামি আলবদরের প্রধান ছিলেন।
পাকিস্তানপন্থী মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ১১টি সংগঠন—
১. পাকিস্তান সামরিক বাহিনী; ২. বিহারী মুসলমান; ৩. জামায়াতে ইসলাম; ৪. ইসলামী ছাত্র সংঘ; ৫. মুসলীম লীগ ৬. নেজামে ইসলাম; ৭. শান্তি কমিটি; ৮. রাজাকার; ৯. আলবদর; ১০. আলশামস এবং ১১. মুজাহিদ বাহিনী গণহত্যা, লুট, ধর্ষণে অংশ নেয়৷
সংগঠন
রাজাকার, আল-বদর, আল শামস্, শান্তি কমিটি।
দল
জামায়াত, মুসলিম লিগ, নেজামে ইসলাম।
ছাত্র সংগঠন
ইসলামী ছাত্র সংঘ (জামাতের অঙ্গ সংগঠন) ।
বামদল
পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (চীনপন্থী)।
মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধু
- ১৯৭১ সালের ৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতগামী শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫ জন।
- ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৬ই মে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরায় বেশ কিছু শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি শরণার্থী সমস্যার ব্যাপকতা অনুধাবনের জন্য বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
- ওডারল্যান্ড ছিলেন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত একমাত্র বিদেশি (ডাচ) নাগরিক।
- নেদারল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ওডারল্যান্ড এর পিতৃভূমি ছিল অস্ট্রেলিয়াতে। Operation Search Light এর সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে রাতের ভয়াবহতার ছবি বিশ্ব গণমাধ্যমে তুলে ধরেন৷
- ইতালির ক্যাথলিক ধর্মযাজক মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যশোরের একটি গির্জায় কর্মরত ছিলেন।
- গির্জায় তিনি কিছু নিরস্ত্র বাঙালিকে আশ্রয় দিলে হানাদার বাহিনী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
- মার্কিন এ কবি ও গীতিকার শরণার্থীদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে ‘September on Jessore Road’ কবিতা লেখেন।
- ১৯৭১ সালেই কবিতাটি নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়। তিনি কবিতাটিকে গানে সুরারোপ করেন।
- ১৯৭১ সালে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল মুক্তিযুদ্ধের উপরে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Cruel Birth of Bangladesh’ রচনা করেন।
- ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ নামে তারবার্তা পাঠান।
- ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ কনসার্টে সংগীত পরিবেশন করেন ব্রিটিশ ব্যান্ড শিল্পি বিটল্স ব্যান্ডের ভোকালিস্ট জর্জ হ্যারিসন।
- জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশের পক্ষে সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরেন।
- কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-এর উদ্যোক্তা ছিলেন জর্জ হ্যারিসন ও বিশ্বখ্যাত ভারতীয় সেতার বাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর।
- কনসার্টটিতে উপস্থিত শিল্পিরা হলেন-বব ডিলান, লিওন রাসেল, বিলি প্রিস্টন, এরিক ক্ল্যাপটন ও রিঙ্গো রকস্টার।
- রাশিয়া ও ভারত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল।
- চীন ও আমেরিকা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল।
- পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত জেনে আমেরিকা পাকিস্তানের পক্ষে জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করে। রাশিয়া (সোভিয়েত ইউনিয়ন) বাংলাদেশের পক্ষে জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ৩ বার Veto প্রদান করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতিসংঘের মহাসচিব ছিলেন উ-থান্ট।
- মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন রিচার্ড নিক্সন। আমেরিকা বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ম নৌ-বহর প্রেরণের উদ্যোগ নেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের পক্ষে ৮ম নৌ-বহর পাঠানোর পাল্টা হুমকি দেয়।
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিকোলাই পদগর্নি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
- যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার।
- ব্রিটেনের বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন মি. উইলসন।
- ২১ নভেম্বর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী গঠিত হয়।
- পাকিস্তান প্রথমে ভারতের ১১টি এয়ারবেসের উপর আক্রমণ করে। পাকিস্তানের আক্রমণের জবাবে ভারত সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। ফলে ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়।
- ৩ ডিসেম্বর ‘৭১ সালে পাকিস্তানের জঙ্গি বিমানগুলো অপারেশন চেঙ্গিস খাঁন’ নামে ভারতের পশ্চিম সীমান্তে একযোগে আক্রমণ চালায়।
- মুক্তিযুদ্ধে যথাক্রমে ১৫২৫ ও ৪০৬১ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত ও আহত হয়।
- আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সমর সেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন।
- ১৯৭১ সালে অজয় মুখোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্য করেছিলেন।
দেশ | রাষ্ট্রপতি | প্রধানমন্ত্রী | পররাষ্ট্র মন্ত্রী |
ভারত | ভি.ভি. গিরি | ইন্দিরা গান্ধী | শরণ সিং |
যুক্তরাষ্ট্র | রিচার্ড নিক্সন |
| উইলিয়াম পি রজার্স |
সোভিয়েত ইউনিয়ন | নিকোলাই পদগোনি | আলেক্সই কোসিগিন | আন্দ্ৰেই গ্লোসিকো |
ব্রিটেন |
| এডওয়ার্ড হিথ | অ্যালেস ডগলাস |
চীন |
| চৌ এন লাই |
|
পাকিস্তান | ইয়াহিয়া খান | নুরুল আমিন |
|
- বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা- ১ জন (ইন্দিরা গান্ধী)
- বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা- ১৫ জন
- বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মাননা- ৩১২ জন ও ১০টি সংগঠন
বুদ্ধিজীবি ও গণহত্যা
- ১৪ ডিসেম্বর রাতে সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হন বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণ।
- মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশা প্রণয়ন করেন।
- ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
ছবি সহ
- ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ জুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছিল।
- মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে এবং ২ লাখ নারীর সম্ভ্রম নষ্ট করে।
- ২১ নভেম্বর ১৯৭১ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী গঠিত হয়। জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ডের সেনাধ্যক্ষ ছিলেন।
- জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তানি পক্ষের আত্মসমর্পণে নেতৃত্বে ছিলেন।
- গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে খন্দকার বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন।
- ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
- ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাক হানাদার মুক্ত হয় এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বীরত্বসূচক খেতাব
- ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, খেতাবপ্রাপ্ত মোট মুক্তিযোদ্ধা ছিল ৬৭৬ জন (বীরশ্রেষ্ঠ ৭ জন, বীর উত্তম ৬৮ জন, বীর বিক্রম ১৭৫ জন ও বীর প্রতীক ৪২৬ জন)।
- বীর উত্তমগণের মধ্যে একমাত্র বেসামরিক নাগরিক হলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
- ৬ জুন ২০২১, বঙ্গবন্ধুর ৪ খুনির খেতাব বাতিল করা হয়। তারা হলেন: মেজর ডালিম (বীর উত্তম), নূর চৌধুরী (বীর বিক্রম), রাশেদ চৌধুরী (বীর প্রতীক) ও মোসলেহ উদ্দিন (বীর প্রতীক)। বর্তমানে খেতাবপ্রাপ্ত মোট মুক্তিযোদ্ধা ৬৭২ জন।
বীরত্বসূচক খেতাবের ক্রমমান | সংখ্যা |
বীরশ্রেষ্ঠ | ৭ জন |
বীরউত্তম | ৬৭ জন |
বীরবিক্রম | ১৭৪ জন |
বীরপ্রতীক | ৪২৪ জন |
মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মোট বীর সন্তান | ৬৭২ জন |
নাম | কর্মস্থল | যুদ্ধের সেক্টর |
ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর | সেনাবাহিনী | ৭ নং সেক্টর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) |
ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ | ইপিআর | ১ নং সেক্টর(রাঙামাটি) |
সিপাহি মোহাম্মদ হামিদুর রহমান | সেনাবাহিনী | ৪ নং সেক্টর (মৌলভীবাজার) |
সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল | সেনাবাহিনী | ২ নং সেক্টর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) |
ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার রুহুল আমিন | নৌবাহিনী | ১০ নং সেক্টর (নৌ-বাহিনী) |
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান | বিমানবাহিনী |
|
ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ | ইপিআর | ৮ নং সেক্টর (যশোর) |
- ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে সেনাবাহিনীর ৩ জন, ইপিআর ২ জন, নৌবাহিনীর ১ জন এবং বিমান বাহিনীর ১ জন।
- বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে প্রথম শহীদ হন ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ এবং সর্বশেষ শহীদ হন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।
- বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় সমাধিস্থ করা হয়।
- বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের সমাধিস্থল পাকিস্তানের করাচিতে ছিল।
- বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গনে অবস্থিত।
- বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ ২০০৭ সালে ভারতের আমবাসা গ্রাম থেকে এনে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী উল্লেখযোগ্য দেশ
এশিয়ার দেশ | তারিখ |
ভুটান (প্রথম স্বীকৃতি) | ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ |
ভারত | ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ |
ইন্দোনেশিয়া | ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
মালয়েশিয়া | ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
ইরাক (প্রথম আরব দেশ, প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন) | ৮ জুলাই ১৯৭২ |
পাকিস্তান | ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ |
ইউরোপের দেশ | তারিখ |
পূর্ব জার্মানি | ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ |
নরওয়ে | ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
ইতালি | ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
ফ্রান্স | ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
আফ্রিকার দেশ | তারিখ |
সেনেগাল | ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
মরিশাস | ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
গাম্বিয়া | ২ মার্চ ১৯৭২ |
আলজেরিয়া | ১৬ জুলাই ১৯৭৩ |
উত্তর আমেরিকার দেশ | তারিখ |
বার্বাডোস | ২০ জানুয়ারি ১৯৭২ |
কানাডা | ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | ৪ এপ্রিল ১৯৭২ |
মেক্সিকো | ১১ মে ১৯৭২ |
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ | তারিখ |
ভেনিজুয়েলা | ২ মে ১৯৭২ |
ব্রাজিল | ১৫ মে ১৯৭২ |
আর্জেন্টিনা | ২৫ মে ১৯৭২ |
মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য
- জাতীয় স্মৃতিসৌধের অন্য নাম সম্মিলিত প্রয়াস।
- সাভারে অবস্থিত স্মৃতিস্তম্ভটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মারক স্থাপনা। সৌধটির স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন।
- জাতীয় স্মৃতিসৌধের উচ্চতা ৪৫.৭ মি বা ১৫০ ফুট।
- স্মৃতিসৌধে ৭টি দেয়াল ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় আকারে সাজানো। ৭টি দেয়াল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ৭টি ধারাবাহিক পর্যায়কে নির্দেশ করে। যেগুলো হল: ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ এর শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান ও ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ।
- মেহেরপুর জেলায় মুজিবনগর স্মৃতিসৌধটি অবস্থিত।
- মুজিবনগর স্মৃতিসৌধটির স্থপতি তানভীর কবির।
- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত।
- ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
- ২০১৪ সালে খুলনায় প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর
- মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনার চুকনগরে সবচেয়ে বড় ও নৃশংস গণহত্যাটি সংঘটিত হয় বলেই গণহত্যা জাদুঘরটি খুলনায় নির্মিত হয়েছে।
- শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধটি মিরপুরে অবস্থিত।
- স্মৃতিসৌধটির স্থপতি মোস্তফা হারুন কুদ্দুস হালি।
- রায়ের বাজারের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে অবস্থিত ইটের ভাটার আকৃতির স্মৃতিসৌধ ।
- ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে দেশের সূর্যসন্তানদের হত্যা করে এখানে পরিত্যাক্ত ইটের ভাটার পিছনে ফেলা রাখা হয়।
- স্মৃতিসৌধটির স্থপতি ফরিদউদ্দিন আহমেদ ও জামি আল শাফি।
- ঢাকার সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। স্মৃতিস্তম্ভটিতে সার্বক্ষণিক শিখা প্রজ্জ্বলন করে রাখা হয়।
- ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত একটি স্থাপনা।
- ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ স্থানটিতে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে অবস্থিত একটি অনন্য সুন্দর ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন ভাস্কর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালেদ।
- এ ভাস্কর্যে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে নারী পুরুষের যুদ্ধে অংশগ্রহণকে প্রতিকায়িত করা হয়েছে।
- ১৯৭৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অপারেজয় বাংলা ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়।
- মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য হলো ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’। স্থপতি আব্দুর রাজ্জাক জয়দেবপুর চৌরাস্তার চত্বরে সুবিশাল এ ভাস্কর্যটি ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করেন।
ভাস্কর্য/স্মৃতিফলক | স্থপতি (ভাস্কর) | অবস্থান |
স্বাধীনতা | হামিদুজ্জামান | কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, ঢাকা। |
মুক্তবাংলা | রশিদ আহমেদ | ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় |
স্মারক ভাস্কর্য | মুর্তজা বশীর | চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় |
অদম্য | গোপাল চন্দ্ৰ পাল | খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় |
চেতনা-৭১ | মোবারক হোসেন নৃপাল | শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় |
দুর্জয় | মৃণাল হক | রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা। |
প্রত্যাশা | মৃণাল হক | ফুলবাড়ীয়া, ঢাকা। |
রক্তসোপান |
| রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস, গাজীপুর। |
মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য গান ও চলচ্চিত্র
- সব কটা জানালা খুলে দাও না …….। গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু, সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল এবং শিল্পী সাবিনা ইসয়াসমিন।
- মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি ……..। গীতিকার গোবিন্দ হালদার, শিল্পী আপেল মাহমুদ।
- এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা।গীতিকার গোবিন্দ হালদার।
- এক নদী রক্ত পেরিয়ে …….। গীতিকার খান আতাউর রহমান এবং শিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ।
- জয় বাংলা বাংলার জয় …….। গীতিকার গাজী মাযহারুল আনোয়ার।
- মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত প্রথম প্রামাণ্য চিত্র জহির রায়হান পরিচালিত ‘Stop Genocide’.
- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন।
- মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’।
- নাসিরউদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত ‘গেরিলা’ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র।
- আলমগীর কবির মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় নির্মিত ‘ধীরে বহে মেঘনা’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা।
- ‘হুলিয়া’ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।
- ‘Let there be Light’ জহির রায়হানের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ডকুমেন্টারি ফিল্ম।
চলচ্চিত্র | পরিচালক |
সংগ্রাম, হাঙ্গর নদী গ্রেনেড | চাষী নজরুল ইসলাম |
আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া | হুমায়ূন আহমেদ |
একাত্তরের যীশু, গেরিলা | নাসিরউদ্দিন ইউসুফ |
আবার তোরা মানুষ হ | খান আতাউর রহমান |
ধীরে বহে মেঘনা | আলমগীর কবির |
জীবনঢুলী | তানভীর মোকাম্মেল |
অনিল বাগচীর একদিন, আমার বন্ধু রাশেদ | মোরশেদুল ইসলাম |
জয়যাত্রা, স্ফুলিঙ্গ | তৌকির আহমেদ |
গেরিলা | নাসির উদ্দিন ইউসুফ |
সংগ্রাম | মনসুর আলী |
চলচ্চিত্র | পরিচালক |
দামাল | রায়হান রাফি |
আশীর্বাদ | মোস্তাফিজুর মানিক |
জয় বাংলা | কাজী হায়াৎ |
একাত্তরের একখন্ড ইতিহাস | মিজানুর রহমান শামীম |
বীরাঙ্গনা ৭১ | ফাখরুল আরেফিন |
ওরা ৭ জন | খিজির হায়াত খান |
জেকে ৭১ | ফখরুল আরেফিন |
একটি না বলা গল্প | পঙ্কজ পালিত |
রেডিও | অনন্য মামুন |
ফুটবল ৭১ | অনম বিশ্বাস |
প্রামাণ্য চলচ্চিত্র | পরিচালক |
কান্ট্রি মেড ফর ডিজাস্টার | রবার্ট রজার্স |
লিবারেশন ফাইটার্স, একসাগর রক্তের বিনিময়ে | আলমগীর কবির |
স্মৃতি-৭১ | তানভীর মোকাম্মেল |
পলাশী থেকে ধানমন্ডি | আব্দুল গাফফার চৌধুরী |
মুক্তির গান, মুক্তির কথা | তারেক মাসুদ |
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও বাংলার অভ্যদ্বয় | সৈয়দ সবার আলী আরজু |
এ স্টেট ইস বর্ন | জহির রায়হান |
ইনোসেন্ট মিলিয়নস | বাবুল চৌধুরী |
চলচ্চিত্র | নির্মাতা |
আগামী (১৯৮৪) | মোরশেদুল ইসলাম |
প্রত্যাবর্তন (১৯৮৬) | মোস্তফা কামাল |
একজন মহান পিতা(২০২১) | মির্জা সাখাওয়াত হোসেন |
হুলিয়া | তানভীর মোকাম্মেল |
চাকা | মোরশেদুল ইসলাম |