বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ পরিচিতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস এর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, যারা সমাজের বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রখ্যাত শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী, এবং পরিবেশবাদী নেতা।

দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা কারা।

দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা কারা।

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ নতুন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে ব্যাংকিং খাতে বিভিন্ন সংস্কার ও নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছিল।

ড. আসিফ নজরুল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল উপদেষ্টা পরিষদের একজন অন্যতম সদস্য। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন সুপরিচিত রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে তার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও তার অংশগ্রহণ ছিল।

আদিলুর রহমান খান
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আদিলুর রহমান খান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি মানবাধিকার রক্ষার জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করে আসছেন। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক ওঠে এবং আইসিটি আইনের আওতায় তিনি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন একজন প্রখ্যাত নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাবেক কমিশনার। তিনি ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি পরিবেশ রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন এবং রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন।

মো. তৌহিদ হোসেন
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেনও উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি পররাষ্ট্রনীতি এবং কূটনৈতিক বিষয়ক একজন বিশিষ্ট বিশ্লেষক ও কলামিস্ট হিসেবে পরিচিত।

নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়াকেও উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা উভয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের নেতৃত্বে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও তারা তাদের কাজ চালিয়ে যান।

সুপ্রদীপ চাকমা
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তিনি আগে মেক্সিকো এবং ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এ এফ হাসান আরিফ
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফও উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। ২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তিনি আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

শারমিন মুর্শিদ ও ফরিদা আখতার
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুর্শিদ এবং উন্নয়ন ও মানবাধিকারকর্মী ফরিদা আখতার উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন। শারমিন মুর্শিদ ভোটাধিকার ও বাক-স্বাধীনতার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, আর ফরিদা আখতার উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে বিকল্প কৃষি উৎপাদন ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছেন।

মিসেস নূর জাহান বেগম

২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। এর আগে তিনি নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যে দায়িত্ব তিনি পেয়েছিলেন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ড. ইউনূসের কাছ থেকে। তিনি এখন গ্রামীণ পরিবারের একটি অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রামীণ শিক্ষার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফারুক-ই-আজম
মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক নৌকমান্ডার ফারুক-ই-আজম, যিনি ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর উপ-অধিনায়ক ছিলেন, উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পেয়েছিলেন।

ডা. বিধান রঞ্জন রায়
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা. বিধান রঞ্জন রায় মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য পরিচিত। তিনি মনোচিকিৎসা সম্পর্কিত বেশ কিছু বইও লিখেছেন এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আ ফ ম খালিদ হোসেন
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর আ ফ ম খালিদ হোসেনও উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিচিতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চূড়ান্ত তালিকা ২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা কে কোন দায়িত্ব পেয়েছেন?

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব বণ্টন করেছেন। দেখে নেওয়া যাক কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন— অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান কে এই ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস?

বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তরবর্তীকালিন সরকার প্রধান হিসেবে শপথ গ্রহন করেছেন ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস হলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও সমাজসেবক, যিনি ক্ষুদ্রঋণ ধারণার

Join Whatsapp Channel

চাকরির বিজ্ঞপ্তি পেতে আমাদের Whatsapp চ্যানেলে যুক্ত হন।